রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০১:৫৮ পূর্বাহ্ন
সৈয়দ রায়হান বিপ্লব,
মামলাসহ নানান অপরাধের কারণে পারিবারিক, সামাজিক বন্ধন নষ্ট হতে বসেছে। ফলে মামলার নিষ্পত্তি আর শান্তি প্রতিষ্ঠায় পীরগঞ্জের সাধারণ মানুষ খোঁজেন লুমুকে। পুরো নাম এ্যাডভোকেট কাজী লুমুম্বা লুমু। রংপুর জজ কোর্টে আইন পেশার সাথে জড়িত তিনি। তার কাছে পারিবারিক, জমিজমা, নারী ও শিশু সহ সামাজিক নানান অপরাধমুলক কর্মকাণ্ডের নিষ্পত্তি করতে আসেন মানুষ। বিনিময়ে তিনি বাদী, বিবাদী কারো কাছেই কোন টাকা নেন না। এ জন্যই প্রতিনিয়তই ব্যস্ত থাকেন তরুন এই আইনজীবী।
জানা গেছে, পীরগঞ্জ পৌরসভার পন্চকান্দর গ্রামের প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ প্রয়াত কাজী আব্দুল হালিমের ছেলে এ্যাডভোকেট কাজী লুমুম্বা লুমু। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে অনার্স, মাস্টার্স করেন। এরপর ১৯৯২ সালে রংপুর জজ কোর্টে আইন পেশা শুরু করেন। পাশাপাশি তিনি রংপুর আইন কলেজের প্রভাষক।
আইন পেশার জীবনের শুরু থেকে চলতি বছরের এ পর্যন্ত কাজী লুমু তার গ্রামের বাড়ীতে স্থাপিত ‘দিকদর্শন ভবন’ নামে ব্যক্তিগত অফিসে হাজারো মানুষের ঘটনার নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন। তার অফিস থেকে মামলা নিষ্পত্তি করতে এসে কেউ হাসেন, কেউ কাঁদেন। কারণ সমঝোতায় কারো সংসার ভাঙ্গে আবার জোড়াও নেয়। তবে উভয়পক্ষের সমঝোতায় তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলেন এ্যাড. কাজী লুমু। কারণ আদালতে দীর্ঘদিন বিচার চলমান থাকায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তরা একপর্যায়ে এসে বিবাদ নিষ্পত্তির জন্য সমঝোতা বৈঠকে জোর দেন। সে আলোকেই কাজী লুমুকে খোঁজে পীরগঞ্জের মানুষ।
কাজী লুমু বলেন, অনেক দিনের মামলা বা পারিবারিক, সামাজিক কোন ঘটনা নিয়ে দু’পক্ষ আমার কাছে নিষ্পত্তির জন্য আসলে সেটি নিরসন না করা পর্যন্ত টেনশনে থাকি। তিনি বলেন, পীরগঞ্জের হরিণ শিং পুকুর নিয়ে চারটি হত্যাকান্ড হয়। সেখানে ১’শ দল ও ২৪ দলের মাঝে দীর্ঘ দিনের বিরোধ নিষ্পত্তি করে ওই পুকুরের পাড়ে ‘বকুল ফুলের’ গাছ রোপন করা হয়েছে। জমি, সম্পত্তি নিয়ে এমন অনেক বড় ঘটনা মীমাংসা করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছি।
তিনি বলেন, বিগত প্রায় ৩০ বছরে আমি ছোট বড় ৫ হাজার ২৫৭ টি মামলা বিনে টাকায় নিষ্পত্তি করে দিয়েছি। এটা আমার ব্রত। আমি সেচ্ছায় মানুষকে এ সেবা দিয়ে আসছি। প্রতিটি সমঝোতা আমি রেজিস্ট্রারে লিপিবদ্ধ করেছি। যে সমস্ত ঘটনার নিষ্পত্তি করে দিয়েছি, কোন টাকা নেইনি। বাদী, বিবাদী মিলে প্রায় সাড়ে দশ হাজার মানুষের সমঝোতা করে দিয়েছি। শুধু মামলাই নয়, মানুষের জীবনে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনা, সমস্যা নিয়ে আমার কাছে আসলে আন্তরিকতার সাথে কাজ করি।
কাজী লুমু তার বাবা দেশের প্রথিতযশা রাজনীতিবিদ প্রয়াত কাজী আব্দুল হালিমের প্রসঙ্গ তুলে বলেন, আব্বা জনগণের নেতা ছিলেন। তার কাছে শিখেছি মানুষকে ভালবাসা এবং মানুষের অধিকার আদায় করা। তিনি সারাজীবন ন্যায় প্রতিষ্ঠায় নির্লোভ, আপোষহীন ও আদর্শের রাজনীতি করে গেছেন। তার আদর্শকে আমি লালন করি। মানুষের মাঝে আমার বাবার বিনিয়োগ করা আদর্শই আমাকে জনগনের কাছে নিয়ে গেছে।
পীরগঞ্জ সদর ইউনিয়নের মিলনপুরের বীমা কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন, পীরগঞ্জ পৌরসভার ওসমানপুরের আব্দুল ওয়াহেদ, গঙ্গারামপুরের মোকাব্বর হোসেন, ধনশালা গ্রামের সোলাইমান মন্ডল চেংটুর সাথে কথা বলে জানা গেছে, লুমু কাজী কখনো ফৌজদারী মামলায় বাদী পক্ষের মামলা পরিচালনা করেন না। কারণ ফৌজদারি মামলায় সত্য, মিথ্যা নির্ণয় করা কঠিন। আবার কোনও মানুষকে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে চান না। আমরা তার কাছে বিরোধ নিষ্পত্তি করে নিয়েছি। আমরা সন্তুষ্ট।
কাজী লুমু বলেন, আমি জীবনের প্রথম দিন আদালতে যাওয়ার আগে বাবা বলেছিল, পীরগঞ্জের মানুষ জীবন দিয়ে আমাকে সারা জীবন রক্ষা করেছে। সেই মানুষদেরকে তুমি অন্যায়ভাবে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করিও না। আর তার ফুপু ফিরোজা বেগম বলেছিল, সমাজের মধ্যে জটিলতা, ঝগড়া, বিবাদ সৃষ্টি করে টাকা রোজগার করিও না। বাবা আর ফুপুর ওই নির্দেশনা নিয়েই আইনপেশা চালিয়ে যাচ্ছি। তাই আইনপেশার পাশাপাশি বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে মানবসেবা করে যাচ্ছি।