রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ১১:৪৩ পূর্বাহ্ন
সরকার বেলায়েত
রাজশাহীর কাটাখালীতে বাসের সঙ্গে মাইক্রোবাস ও লেগুনার ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত ১৭ জনের পরিচয় জানা গেছে। নিহত ১৭ জনই রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের বাসিন্দা।
এরমধ্যে ১ নং চৈত্রকোল ইউনিয়নের রাঙ্গামাটি গ্রামের একই পরিবারের পাঁচজন এবং ১৩ নং রামনাথপুর ইউনিয়নের বড় মহাজিদপুর গ্রামের একই পরিবারের পাঁচজনসহ ছয়জন, ৮ নং রায়পুর ইউনিয়নের দ্বাড়িকাপাড়া গ্রামের একই পরিবারের তিনজন ও পৌর এলাকার প্রজাপাড়ার একই পরিবারের তিনজন নিহত হয়েছেন।
নিহতরা হলেন, উপজেলার চৈত্রকোল ইউনিয়নের রাঙ্গামাটি গ্রামের সালাহউদ্দিন (৩৮), তার স্ত্রী সামসুন্নাহার (৩২), শ্যালিকা কামরুন্নাহার (২৫) ছেলে সাজিদ (১০) ও মেয়ে সাবাহ খাতুন (৩), রামনাথপুর ইউনিয়নের বড় মহাজিদপুর গ্রামের ফুল মিয়া (৪০), তার স্ত্রী নাজমা বেগম (৩৫), ছেলে ফয়সাল (১৫), মেয়ে সুমাইয়া (৭) ও সাবিহা (৩), মিঠিপুর ইউনিয়নের দুরামিঠিপুর গ্রামের সাইদুর রহমান (৪৫), পীরগঞ্জ পৌরসভার প্রজাপাড়ার মোটরসাইকেল মেকার তাজুল ইসলাম ভুট্টো (৪০), স্ত্রী মুক্তা বেগম (৩৫), ছেলে ৮ম শ্রেণির ছাত্র ইয়ামিন (১৪), রায়পুর ইউনিয়নের দ্বাড়িকাপাড়া গ্রামের মোকলেছার রহমান (৪০), স্ত্রী পারভীন বেগম (৩৫) ও ছেলে পাভেল মিয়া (১৮) ও পীরগঞ্জ থানাপাড়ার ড্রাইভার হানিফ উদ্দিন পঁচা। পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবার (২৬ মার্চ) দুপুর সোয়া ২টার দিকে রাজশাহী নগরের কাটাখালি থানার অদূরে বাসের সঙ্গে মাইক্রোবাস ও লেগুনার ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে মাইক্রোবাসে বিস্ফোরণ ঘটে। এসময় পাশে থাকা লেগুনাতেও আগুন ধরে যায়।
ঘটনাস্থল থেকে ছয়জনকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে তারা মারা যান। পরে মাইক্রোবাস থেকে আরও ১১ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও দুজন। আহতদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রাজশাহীর কাটাখালি থানার সিসি টিভির ভিডিও দৃশ্যে দেখা যায়, পীরগঞ্জের কালো রংয়ের হাইস মাইক্রোবাসটি সড়কের ডান পাশ (ভুল পথে) চলছিল।
এ সময় বিপরীত দিক থেকে আসা দ্রুতগামী হানিফ পরিবহনের একটি বাস মাইক্রোবাসটিকে ধাক্কা দেয়। এতে মাইক্রোবাসের গ্যাস সিন্ডিার বিষ্ফোরণের ফলে মাইক্রোতে আগুন ধরে যায়। দুর্ঘটনায় ১৭ জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে শুক্রবার সন্ধ্যায় পীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিরোদা রানী রায় বলেন, নিহত ১৭ জনের মধ্যে ১৫ জনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। তারা সকলেই পীরগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা। বাকী দুজনের পরিচয় এখনো জানা যায়নি। তারা পীরগঞ্জের নাকি অন্য জায়গার তা নিশ্চিত হতে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন চেয়ারম্যানরা যোগাযোগ করছেন।
এদিকে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে নিহতদের পরিবারসহ গ্রামজুড়ে চলছে শোকের মাতম। কয়েকটি পরিবারে আহাজারি করারও কেউ নেই। শোকে স্তব্ধ গ্রামবাসী রয়েছেন লাশের অপেক্ষায়। নিহতদের পরিবারিক সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সকালে (২৬ মার্চ) উপজেলা সদরের রফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ীর কালো রংয়ের হাই-এইস মাইক্রোবাস নিয়ে পীরগঞ্জের কয়েকটি পরিবারের ১৭ জন সদস্য রাজশাহীতে বেড়ানোর উদ্যেশ্যে রওনা দেন।
মাইক্রোবাসটি জুমার নামাজের পর রাজশাহীর কাটাখালি থানার সামনে সড়কের ডান পাশ দিয়ে চলতে গেলে বিপরীত দিক থেকে আসা হানিফ পরিবহনের একটি বাস সামনে থেকে ধাক্কা দেয়। এতে ওই মাইক্রোতে থাকা ১৭জন যাত্রীই মারা যান। শুধু প্রাণে বেঁচে যান চালক হানিফ মিয়া।তবে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ফুল মিয়া, মেকার ভুট্টু এবং সালাউদ্দিনের পরিবারের সকল সদস্যই নিহত হওয়ায় পরিবারের আর কেউই আহাজারি করার জন্য বেঁচে নেই।
নিহত পরিবারের কর্তারা সবাই কর্মক্ষম এবং ব্যবসায়ী। নিহত পরিবারগুলোর মধ্যে ফুল মিয়ার বৃদ্ধা মা ফইমনন্নেছা এবং মোকলেছারের একমাত্র মেয়ে ৮ম শ্রেণির ছাত্রী মোহনা বাড়িতে থাকায় বেঁচে গেছেন। বাবা-মা-ভাইকে হারিয়ে মোহনা এখন বাকরুদ্ধ। শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে মানুষদেরকে দেখছেন। কান্নাও ভুলে গেছে মোহনা। চৈত্রকোল ইউনিয়নের রাঙ্গামাটি গ্রামের বাসিন্দা হবিবর রহমান বলেন, সালাউদ্দিন বিয়ের পর থেকে তার শ্বশুর বাড়ি রামনাথপুর ইউনিয়নের বড় রাজারামপুর গ্রামে থাকতেন।
দুর্ঘটনায় তার পরিবারের সবার মত্যৃর সংবাদে গ্রামজুড়ে শোকের মাতম শুরু হয়েছে। রায়পুর ইউনিয়নের দ্বাড়িকাপাড়া গ্রামের মোসলেম উদ্দিন বলেন, এক দুর্ঘটনায় এতগুলো মানুষের মৃত্যু এর আগে এখানে কখনো হয়নি। এই শোক সহ্য করা খুব কষ্টের। শুনেছি আগুনে পুড়ে গেছে তাদের লাশ। তবুও শেষ বারের মত দেখার জন্য অপেক্ষা করছি।
রামনাথপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাদেকুল ইসলাম বিএসসি বলেন, এতগুলো লাশের শোক আমি কী বলে শান্তনা দিবো। শোক জানানোর ভাষাও হারিয়ে ফেলেছি। পীরগঞ্জ থানার ওসি সরেস চন্দ্র বলেন, ড্রাইভার হানিফকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহতদের লাশ দ্রুত পীরগঞ্জে আনার সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। রাজশাহীর কাটাখালি থানার সিসি টিভির ভিডিও দৃশ্যে দেখা যায়, পীরগঞ্জের মাইক্রোবাসটি সড়কের ডান পাশ (ভুল পথে) চলছিল। এ সময় বিপরীত দিক থেকে আসা দ্রুতগামী হানিফ পরিবহনের একটি বাস মাইক্রোবাসটিকে ধাক্কা দেয়। এতে মাইক্রোবাসের গ্যাস সিলিন্ডার বিষ্ফোরণে আগুন ধরে যায়। এসময় পাশে থাকা একটি লেগুনাতেও আগুন ধরে যায়। ঘটনাস্থল থেকে ছয়জনকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে তারা মারা যান। পরে মাইক্রোবাস থেকে আরও ১১ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। শুধুমাত্র মাইক্রোচালক হানিফ মিয়া প্রাণে বেঁচে যান।